উচ্চ রক্তচাপ কী এবং উচ্চ রক্তচাপ কমানোর সহজ উপায় ঔষধ সমুহ ২০২৩

উচ্চ রক্তচাপ কমানোর সহজ উপায় কী? চলুন আগে জানি উচ্চ রক্তচাপ কী এবং কেনো এটি নিয়ন্ত্রন করা অতি প্রয়োজন। বর্তমান সময়ে উচ্চ রক্তচাপকে নীরব ঘাতক বলা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, সারা বিশ্বে প্রায় ১৫০ কোটি মানুষ এই উচ্চ রক্তচাপ সমস্যায় ভুগছেন। আর এই সমস্যার কারণে সারা বিশ্বে বছরে প্রায় ৭০ লক্ষ মানুষ মারা যাচ্ছে।এই মরণ ঘাতক জটিল সমস্যাটি দিন দিন বেড়েই চলেছে, ফলে মানুষ বিপদের সম্মুখীন হচ্ছে। এটি নিয়ন্ত্রনে না থাকার কারণে শরীরেরে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে পতঙ্গে গুরুতর সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপের কারণে হৃদযন্ত্রের পেশিগুলো দুর্বল হয়ে যায়। ফলে দুর্বল হৃদযন্ত্র সারা দেহে রক্ত পর্যাপ্ত পরিমানে পাম্প করতে পারে না এবং হৃদপিন্ড বন্ধ হয়ে হার্ট অ্যাটাকের মতো মারাত্বক সমস্যা হতে পারে। তাছাড়া উচ্চ রক্তচাপের কারণে কিডনি নষ্ট, স্ট্রোক বা রক্তক্ষরণও হতে পারে। এমন অবস্থায় রোগী মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ কমানোর সহজ উপায় এবং কিছু প্রাকৃতিক উপায় রয়েছে। আপনি চাইলেই ডাক্তারের পরামর্শে ঔষধ খাওয়ার পাশাপাশি এই উপায় গুলো ব্যবহার করতে পারেন যার ফলে আপনার উচ্চ রক্তচাপ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
উচ্চ রক্তচাপ কি ও কারণ সমুহঃ
একজন সুস্থ মানুষের স্বাভাবিক রক্তচাপ থাকার কথা ১২০/৮০ মিলিমিটার মার্কারি। কিন্তু সেটি যদি কোনো কারণে পরপর দুইদিন ১৪০/৯০ এর বেশি থাকে তাহলে সেটিকে উচ্চ রক্তচাপ বলে চিহ্নিত করা হয়। তবে রোগীর বয়স যখন ৮০ বছর বা তার বেশি হবে তখন রক্তচাপের পরিমাপক বেশি হবে।
যার সংখ্যা বেশি, তাকে বলা হয় সিস্টোলিক চাপ এবং যার সংখ্যা কম, তাকে বলা হয় ডায়াস্টোলিক চাপ। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কোনও ব্যক্তির রক্তচাপ ১২০/৮০ mmHg হলে ১২০ হল সিস্টোলিক নম্বর এবং ৮০ হল ডায়াস্টোলিক নম্বর। সাধারণত এক জন সুস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রে আদর্শ ব্লাড প্রেশার হল– ১২০/৮০ মিলিমিটার মার্কারি।
একজন সুস্থ মানুষের রক্তচাপ থাকার কথা ১২০/৮০ mmHg। এখানে ১২০ mmHg হলো সিস্টোলিক রক্তচাপ এবং ৮০ mmHg হলো ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ। কিন্তু কোনো কারণে যদি মানুষের রক্তচাপ ১৪০/৯০ mmHg এর বেশি হয়ে যাই, তাহলে সেটিকে উচ্চ রক্তচাপ বলে চিহ্নিত করা হয়। তবে মানুষের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে রক্তচাপের পরিমান ও বৃদ্ধি পাই।
উচ্চ রক্তচাপের কারণ সমুহঃ
- অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাবার, যেমন- মাংস, মাখন ও ডুবোতেলে ভাজা খাবার খেলে শরীরের ওজন বাড়বে। তাছাড়া ডিমের হলুদ অংশ এবং কলিজা, গুর্দা, মগজ এসব খেলে রক্তে কলেস্টেরল বৃদ্ধি পাই। রক্তে অতিরিক্ত কলেস্টেরল হলে রক্তনালির দেয়াল মোটা ও শক্ত হয়ে যায়। ফলে উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেই।
- বেশি লবণ বা সোডিয়ামযুক্ত খাবার না খেলে উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেই।
- পটাশিয়াম যুক্ত খাবার যেমন- কলা, অ্যাভোক্যাডো, টমেটো, রাঙা আলু, স্যামন মাছ, টুনা, বাদাম, দইয়ের মতো খাবার না খেলে।
- ধূমপান, মদ্যপান করলে , তাছাড়াও অতিরিক্ত টেনশন করলে উচ্চ রক্তচাপ দেখা যাই।
উচ্চ রক্তচাপ কমানোর প্রাকৃতিক উপায়ঃ
উচ্চ রক্তচাপ কীভেবে প্রাকৃতিক উপায়ে কমানো যাই তা আমারা সবাই জানতে চাই। প্রাকৃতিক উপায়ে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনের কিছু উপাই রয়েছে। যদি আপনি এই নিয়ম গুলো অনুসরণ করেন, তাহলে আশা করি আপনি উচ্চ রক্তচাপ অনেকটা নিয়ন্ত্রন করতে পারবেন।
উচ্চ রক্তচাপ কমানোর প্রাকৃতিক নিয়ম সমুহঃ
প্রথমত, আপনাকে সবসময় চিন্তা মুক্ত থাকতে হবে। অতিরিক্ত টেনশন করা যাবে না। বিশেষজ্ঞরা মতে, যদি আপনি উচ্চ রক্তচাপ অনুভব করেন তাহলে কফি, চা, চকোলেট এবং অন্যান্য ক্যাফেইনযুক্ত উপাদানগুলো খাওয়া যাবে না। কিছু নির্দিষ্ট ইয়োগাও রয়েছে যা প্রাকৃতিকভাবে রক্তচাপ স্বাভাবিক পর্যায়ে আনতে সাহায্য করে। ডাউনওয়ার্ড ডগ, ব্যাকবেন্ড, হেডস্ট্যান্ড, ডানে বায়ে ঘাড় ঘোড়ানোর মতো ব্যায়ামগুলো করতে পারেন, যা উচ্চ রক্তে চাপ কমাই। তাছাড়া ধূমপান, মদ্যপান খাওয়া পরিহার করতে হবে।
কিছু রিপোর্ট অনুযায়ী দেখা যাই যে, গোলমরিচ প্রাকৃতিকভাবে এবং দ্রুত রক্তচাপ কমিয়ে আনার একটি কার্যকর উপাদান হিসাবে কাজ করে। এটি রক্ত প্রবাহ উন্নত এবং রক্তনালীকে প্রসারিত করতে পারে ফলে রক্তচাপ কমে যাই। এছাড়া আপনি এক কাপ গরম পানিতে লেবুর রস, এক চা চামচ গোলমরিচ এবং মধু মিশিয়ে পান করতে পারেন যা আপনার উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্যে করবে।
তাৎক্ষনিক উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ঔষধ ও উপায় সমুহঃ
তাৎক্ষনিকভাবে আপনার উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য আপনাকে আগে আপনার রক্তচাপ মাপতে হবে। যদি আপনার রক্তচাপ ৯০/১৪০ mmHg বেশি হয় তাহলে এটি উচ্চ রক্তচাপ হিসাবে বিবেচিত হবে। সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ি ল্মেসিপ ২০ এম জি ট্যাবলেট (Olmecip 20 MG Tablet), একটি এনজিওটেসটিনn2 রিসেপ্টর ব্লকার (এআরবি) খেতে পারেন যা রক্তচাপ কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি একা বা অন্যান্য ঔষধের সাথে সমন্বয় ব্যাবহার করা জেতে পারে । এটি রক্তচাপকে শিথিল করতে সাহায্য করে উচ্চ রক্তচাপ কমায়, ফলে রক্ত সহজে চলাচল করতে পারে।

রক্তচাপ বা উচ্চ রক্তচাপ কমানোর সহজ উপায় কী?
আপনার রক্তচাপ কমানোর জন্য আপনাকে আগে জানতে হবে যে আপনার কোন ধরণের রক্তচাপ। রক্তচাপ ২ ধরণের হয়- সিস্টোলিক রক্তচাপ ও ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ। সেক্ষেত্রে ২ ধরণের উপায় আছে। নিচে সিস্টোলিক রক্তচাপ ও ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ কমানোর সহজ উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলঃ
সিস্টোলিক রক্তচাপ কমানোর উপায়ঃ
হৃৎপিণ্ড সংকোচনকে সিস্টোল বলা হয়। হৃদপিণ্ডের সংকোচনের ফলে রক্ত ছিটকে বের হয়ে ধমনীতে প্রবেশ করে। এ সময় ধমনীর দেওয়ালে রক্তের যে চাপ তৈরি হয় তাকে সিস্টোলিক রক্তচাপ বলা হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় সিস্টোলিক রক্তচাপ হবে ১২০ (mmHg) মিলিমিটার মার্কারি অথবা তার কম হয়। নিচে সিস্টোলিক রক্তচাপ কমানোর উপায় দেওয়া হলঃ
রসুনের মধ্যে এলিসিন থাকে যা শরীরে নাইট্রিক অক্সিডের উৎপাদন বৃদ্ধি করে এবং মাংস পেশিকে আরাম প্রদান করে। তাই রক্তচাপের সমস্যায় ভোগা রোগীদের প্রতিদিন এক কোয়া রসুন খালি পেটে খাওয়া উচিত। তাছাড়া অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাবার, যেমন- মাংস, মাখন ও ডুবোতেলে ভাজা খাবার খেলে শরীরের ওজন এবং ডিমের হলুদ অংশ এবং কলিজা, গুর্দা, মগজ এসব খেলে রক্তে কলেস্টেরল বৃদ্ধি পাই। তাই এগুলো অল্প পরিমানে খেতে হবে। তাছাড়া ধূমপান, মদ্যপান খাওয়া পরিহার করতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ি ঔষধ খাওয়া ও জীবন যাপন করতে হবে।
ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ কমানোর উপায়ঃ
হৃৎপিণ্ড প্রশারণের সময়কে সিস্টোল বলা হয়। হৃদপিণ্ডের প্রশারণের ফলে রক্ত ছিটকে বের হয়ে ধমনীতে প্রবেশ করে। এ সময় ধমনীর দেওয়ালে রক্তের যে চাপ তৈরি হয় তাকে ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ বলে। স্বাভাবিক অবস্থায় ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ হবে ৮০ (mmHg) মিলিমিটার মার্কারি অথবা তার কম। নিচে ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ কমানোর উপায় দেওয়া হলঃ
ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ কমানোর জন্য আপনাকে মাংস, মাখন, দুধ, ডিম এগুলো খেতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ি ঔষধ খাওয়া ও জীবন যাপন করতে হবে। তাহলে আপনি আপনার ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করতে পারবেন।
সর্বশেষ কথাঃ
উচ্চ রক্তচাপকে নীরব ঘাতক বলা হয়। এই সমস্যার কারণে সারা বিশ্বে বছরে প্রায় ৭০ লক্ষ মানুষ মারা যাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, সারা বিশ্বে প্রায় ১৫০ কোটি মানুষ এই উচ্চ রক্তচাপ সমস্যায় ভুগছেন। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করার জন্য অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাবার, যেমন- মাংস, মাখন ও ডুবোতেলে ভাজা খাবার এবং ডিমের হলুদ অংশ এবং কলিজা, গুর্দা, মগজ এসব খাবার খাওয়া যাবে না। মদ্যপান বা ধুমপান খাওয়া পরিহার করতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ি ঔষধ খাওয়া থেকে শুরু করে জীবন যাপন পরিচালনা করতে হবে। আর এইগুলো হল উচ্চ রক্তচাপ কমানোর সহজ উপায় সমুহ।
আরো পড়ুনঃ
- চুল পড়া বন্ধ করার উপায় ঔষধ এবং চুল পড়ার কারণ সমুহ- সবকিছুর সমাধান
- S বা স দিয়ে ছেলেদের ইসলামিক নাম অর্থসহ
- মোটর সাইকেল ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম ও শর্তসমুহ
- মধু ও কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা-২০২৩
- Best Vegan Comfort Food Recipes 2023
ট্যাগসমুহঃ
- রক্তচাপ কমানোর সহজ উপায়
- তাৎক্ষনিক উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ঔষধ
- উচ্চ রক্তচাপ কমানোর প্রাকৃতিক উপায়
- উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ভেষজ ঔষধ
- উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ঘরোয়া উপায়
- উচ্চ রক্তচাপ কমাতে লেবু
- উচ্চ রক্তচাপ কমানোর খাবার
- সিস্টোলিক রক্তচাপ কমানোর উপায়
- ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ কমানোর উপায়