হেলথ টিপস

চুল পড়া বন্ধ করার উপায় ঔষধ এবং চুল পড়ার কারণ সমুহ- সবকিছুর সমাধান

আপনি কি চুল পড়ার সমস্যায় ভূগছেন। তাহলে এই পোস্টি আপনার জন্য । আজকে আমি আপনাদের জানাব কীভাবে আপনার চুল পড়া রোদ করতে পারেন এবং কি কাজ করলে চুল ঘন ও কালো হবে। তাই আপনারা এই পোস্টি ভালভাবে পড়বেন যেন চুল এবং চুল পরা সম্পর্কে সকল কিছু জানতে পারেন।

অতিরিক্ত চুল পড়া বন্ধ করার উপায়ঃ

আজকাল কম বেশি সবাই চুল পড়া সমস্যায় ভূগছে। তবে প্রতিদিন ১০০ টি চুল পড়ে যাওয়া স্বাভাবিক হলে ও তার বেশি চুল পড়লেই বিপদ। চুল পড়া বন্ধ করার জন্য যেসকল খাবার খাবেন- ভিটামিন ই যুক্ত খাবার, সামুদ্রিক মাছ ডিম, দুধ ইত্যাদি চুলের জন্য খুবই উপকারী। ঘৃতকুমারী, আমলকি, শিকাকাই, নিমের গুঁড়া একই পরিমাণে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে চুলে দিতে পারেন। সপ্তাহে একবার এটির ব্যবহার চুল পড়া অনেকটাই কমাবে। এছাড়া ডিম, মেথির গুঁড়া ও টক দই মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে চুলে দেওয়া আরও একটি ভাল প্রাক্টিস। আর উপরের কাজ গুগো ভালভাবে করলে আশা করি এটি হবে আপনার অতিরিক্ত চুল পড়া বন্ধ করার উপায়।

চুল পড়া বন্ধ করার উপায় ঔষধ ও তেলের নামঃ

চুল পড়া সমস্যা নাই এরকম মানুষ খুব কম সংখ্যকই আছে। আর তাই এই সমস্যা সমাধান করার জন্য তেল ও ঔষধের গুরুত্ব অনেক বেশি। নিচে চুল পড়া বন্ধ করার জন্য ঔষধ এবং তেলের নাম ও ভূমিকা সংক্ষেপে আলোচনা করা হলঃ

চুল পড়া বন্ধ করার ঔষধের নাম ও ভূমিকাঃ

চুল পড়া বন্ধ করার ঔষধের নাম হল মিনোক্সিডিল (Minoxidil), যা প্রাথমিকভাবে চুলের বৃদ্ধি এবং পুরুষদের মধ্যে টাকের চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এই ওষুধটি ব্যবহার করলে মাথার ত্বকের সামনের অংশে চুল পড়া এবং টাক পড়ার ক্ষতি করে না। এই ওষুধের প্রায় ২ শতাংশ মহিলাদের জন্য ব্যবহার করা হয় যাতে মহিলাদের চুল পাতলা হওয়ার সমস্যা রোধ হয়।

তেলে খানিকটা মধু মিশিয়ে চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করে ৩০-৪০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ডিমের কুসুমের সাথে সামান্য অলিভঅয়েল ও লেবুর রস মিশিয়ে চুলে ১-২ ঘণ্টা লাগিয়ে রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ফলে আপনার চুল পড়া তো বন্ধ হবেই সাথে দ্রুত চুল বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।

চুল পড়া বন্ধ করার তেলের নাম ও ভূমিকাঃ

চুল পড়া বন্ধ করার জন্য অনেকে অনেক ধরনের তেল ব্যবহার করে। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে চার ধরনের তেল Suggest করি। যেগুলো আপনার চুল পড়া বন্ধে অনেক বেশি কাজ করবে। নিম্নে এই চারটি তেল সম্পর্কে আলোচনা করা হলঃ

১। বার্গামট অয়েলঃ

লেবু জাতীয় টক ফল (Citrus Fruit) যা অনেকাংশে কমলা লেবুর সঙ্গে সাদৃশ্য রয়েছে, একে বার্গামট  অরেঞ্জ (Bergamot Orange) বলেও ডাকা হয়। সাধারণত সুগন্ধী-সহ অন্য প্রসাধন সামগ্রী তৈরিতে এটি ব্যবহৃত হয়। শুধু তা-ই নয়, এটি বিভিন্ন রকমের খাদ্য ও পানীয়ের স্বাদ বাড়াতেও ভাল কাজ করে।

বার্গামট এসেনশিয়াল অয়েল (Bergamot oil) অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল উপাদান সম্পন্ন যা একটি স্বাস্থ্যকর স্কাল্পের জন্য উপযোগী তেল। এটির প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য স্কাল্প ঠাণ্ডা রাখে এবং ফোঁড়া বা অতিরিক্ত ঘামের মতো সমস্যা কমায়। প্রদাহ বা Infection চুল পড়ার জন্য দায়ী হতে পারে। নারকেল তেলের সঙ্গে ৩-৪ ফোঁটা বার্গামট মিশিয়ে স্কাল্পে লাগাতে পারেন। তার পরে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে এবং এটি চুল পড়া রোধে অনেক ভাল কাজ করে।

২। সাইডার উড অয়েলঃ

ভবিষ্যতে চুল পড়া রোধে করার জন্য সাইডার উড তেল ব্যবহার করতে পারেন! এই অপরিহার্য তেলটি স্কাল্পে তেল উৎপাদনকারী গ্রন্থিগুলির ভারসাম্য বজায় রাখে এবং চুলের জন্য দরকারি ব্যাকটেরিয়াকে কাজ করার পরিবেশ তৈরি করতে সাহায্যে করে। এছাড়া এই তেলে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা খুশকি এবং শুষ্ক এবং ফ্ল্যাকি স্কাল্পের সমস্যা দূর করে। এই তেলটি স্কাল্পের স্বাস্থ্য বজায় রেখে চুলের বৃদ্ধি ঘটায়। নারকেল তেলের সঙ্গে ৩ ফোঁটা সাইডারউড এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে স্কাল্পে লাগাতে পারেন যা চুল পড়া তুলনামূলক ভালে কমিয়ে দিবে।

৩। রোজমেরি অয়েলঃ

রোজমেরি নামক গাছের ফুল ও পাতা থেকে রোজমেরি তেল বা অয়েল তৈরি হয়। সাধারণত ভূমধ্যসাগরের কিছু অঞ্চলে বেড়ে ওঠা এই উদ্ভিদটি প্রসাধন সামগ্রী এবং ওষুধ হিসেবে ব্যবহ্রত হয়। এই তেল একাধারে টনিক, চুল পড়া,অ্যান্টিসেপ্টিক, কৃমিনাশক, পাচক, বেদনানাশক, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিসহ আরো নানা ধরণের কাজ করে থাকে। চুলের যত্নে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন  ধরনের এসেনশিয়াল (Essential Oil) অয়েলের মধ্যে রোজমেরি অয়েল অন্যতম। চুল গজানো থেকে শুরু করে চুলের ঔজ্জ্বল্য ও চুল্ পড়া রোধে, চুল পুনরুদ্ধার করতে, খুশকি দূর করতে এই তেলের কোনো তুলনা নাই।

৪। লেমনগ্রাস অয়েলঃ

লেমনগ্রাস ঘাস একটি হার্ব জাতীয়, যা সাধারণত রান্নায় এবং হারবাল জাতীয় ওষুধে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। লেমনগ্রাস অ্যাসেনশিয়াল অয়েল হল সাইট্রিস ফ্লেভারের একটি পাওয়ারফুল অ্যাসেনশিয়াল অয়েল। সাধারণত সুগন্ধি এবং সাবান তৈরিতে এই অ্যাসেনশিয়াল অয়েলটি ব্যবহার করা হয়ে থাকলে ও এটি বর্তমানে চুল রোধ করার জন্য অনেক বেশি ব্যবহার করা হয়।

চুল পড়া বন্ধ করার উপায় ঔষধ
চুল পড়া বন্ধ করার উপায় ঔষধ

মহিলাদের চুল পড়া বন্ধ করার উপায়ঃ

চুল পড়ার সমস্যা আজকাল প্রায় মহিলাদের দেখা যাই। চিকিৎসকদের মতে, মহিলাদের চুল পড়ে যাওয়ার প্রধান কারণসমুহ-এটি প্রথমত একটি বংশগত সমস্যা, তাছাড়া থাইরয়েডের সমস্যা, ক্যালসিয়াম ও আয়রনের অভাব, খাদ্যে পূষ্টিহীনতার অভাব, বিভিন্ন ঔষধের পার্শ প্রতিক্রিয়া এবং হরমোনের ভারসাম্য টিক না থাকাই এই চুল পড়া সমস্যা হয়ে থাকে। আর এই সমস্যা সমাধানের জন্য যা করতে হবে তা নিচে আলোচনা করা হলঃ

তেলে খানিকটা মধু ভালভাবে মিশিয়ে চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করে ৩০-৪০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ডিমের কুসুমের সাথে সামান্য অলিভঅয়েল ও লেবুর রস মিশিয়ে চুলে ১-২ ঘণ্টা লাগিয়ে রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ফলে এটি চুল পড়া তো বন্ধ করবেই সাথে দ্রুত চুল বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।

বিভিন্ন ধরনের তেল আছে যা চুল পড়া রোধ করতে অনেক বেশি কাজ করে। উদাহরণসরুপ- অ্যালোভেরা জেল, অলিভ অয়েল ইত্যাদি।

অ্যালোভেরা জেল– এটি সপ্তাহে ২ বার মাথার চুলের গোড়াই লাগিয়ে ২০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়া ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন আপনার চুল পড়া অনেকটা কমে যাবে।

অলিভ অয়েল– ১-৩ চা চামচ অলিভ অয়েল এর সাথে ১ চামচ জিরা ৫ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন। তারপর এগুলো ছেঁকে তেল আলাদা করেন। তেল এর সাথে হালকা মধু মিশিয়ে মাথাই লাগান এবং ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলেন। দেখবেন আপনার চুল পড়া অনেকটা কমে যাবে। তাছাড়া পিঁয়াজের রস মাথাই লাগাতে পারেন, এটি ও অনেক ভাল কাজ করে। আর এইগুলো সব মহিলাদের চুল পড়া বন্ধ করার উপাই ঔষধ।

ছেলেদের চুল পড়া বন্ধ করার উপায়ঃ

বর্তমানে ছেলেদের চুল পড়া বিশেষভাবে লক্ষণীয়। আর চুল পড়ার প্রধান কারণ সমুহঃ হরমোনজনিত কারণ- অ্যান্ড্রোজেনিক হরমোন যেমন টেস্টোস্টেরন, অ্যান্ড্রোস্ট্রেনডিয়ন, ডিএইচটি এগুলো সাধারণত পুরুষের বেশি ও মহিলাদের কম পরিমাণে থাকে। এ হরমোনগুলো হেয়ার ফলিকলের ওপর বিশেষভাবে কাজ করে ফলে চুল পড়া ত্বরান্বিত করে। সে কারণে মহিলাদের তুলনাই পুরুষের চুল বেশি পড়ে। তাছাড়া থাইরয়েডের সমস্যা, ক্যালসিয়াম ও আয়রনের অভাব, খাদ্যে পূষ্টিহীনতার অভাব, বিভিন্ন ঔষধের পার্শ প্রতিক্রিয়া এবং হরমোনের ভারসাম্য টিক না থাকাই এই চুল পড়া সমস্যা হয়ে থাকে।

ছেলেদের চুল পড়া বন্ধ করার জন্য যা করতে হবে তা নিচে আলোচনা করা হলঃ

১। কখনও ভেজা চুল আঁচড়াবেন না যা অনেক পুরুষই হয়তো এ বিষয়টি মানেন না। কারণ চুল ভেজা অবস্থায় চুলের গোড়া নরম থাকে। ফলে চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ানোর সময় চুল পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

২। শরীরের পানি শূন্যতার কারণে চুল পড়ে যাই। তাই সবার উচিত প্রতিদিন ২-৩ লিটার পানি পান করা।

৩। আদা, পেঁয়াজ ও রসন এদের রস চুলে লাগানো হলে চুলের গোড়া শক্ত হয়, ফলে চুল পড়া কমে যাই।

৪। তেলের সাথে মধু ভালভাবে মিশিয়ে চুলে লাগাবেন যা আপনার চুলকে আর মজবুদ করবে।

৫। সবসময় পষ্টিকর খাবার খাবেন যা দেহের পাশাপাশি আপনার চুলের সুন্দর্য বৃদ্ধি করবে।

আশা করি উপরের সকল কিছু ভালভাবে করলে ছেলেদের চুল পড়ার উপাই ঔষধ সম্পর্কে আর কোথাও যেতে হবে না।

চুল পড়া বন্ধ করার উপায় ঔষধ
চুল পড়া বন্ধ করার উপায় ঔষধ

চুল পড়া বন্ধ করার ইসলামিক উপায়ঃ

বৈজ্ঞানিক উপায়ে যেমন চুল রোধ করার উপায় আছে, টিক তেমনিভাবে ইসলামিক উপায়ে চুল রোধ যাই। প্রথমে হাতের তালুতে তেল নিয়ে ‘মুসাল্লামা তুল্লা শিয়াতা ফী-হা‘ এই দুআটা পড়ে তিনবার ফুঁ দিবেন। তারপর তেল গুলো মাথায় মালিশ করবেন।” মূলত: এটি একটি কুরআনের আয়াতকে অ জায়গায় ব্যবহারের শামিল। তবে কুরআন-হাদিসে কোথাও কুরআনের এই আয়াতাংশটিকে চুল পড়া রোধ বা ফর্সা হওয়ার দুআ তো দূরের কথা সাধারণ রুকিয়ার দুআ হিসেবেও উল্লেখ করা হয় নি।

মোট কথাঃ

চুল পড়া বর্তমান সময়ে একটি সাধারণ সমস্যা যা পুরুষ ও মহিলা উভয়ের হয়ে থাকে। আর চুল পড়া বন্ধ করার উপায় হল- নিয়মিত চুলের যত্ন নেওয়া, পষ্টি সম্মত খাবার খেতে খাওয়া, চুলে অ্যালোভেরা জেল বা অলিভ অয়েল জাতীয় তেল ব্যবহার করা, তেলের সাথে মধু মিশিয়ে মাথায় দেওয়া ইত্যাতি কাজ করলে আশা করি চুলের অনেক অপকার পাবেন এবং চুল পড়া বন্ধ হবে।

আরো পড়ুনঃ

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button