ড্রাইভিং লাইসেন্স

মোটর সাইকেল ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম ও শর্তসমুহ

বর্তমানে অনেকে মোটর সাইকেল ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম ও শর্তসমুহ জানে না। তাই তারা মোটরসাইকেলের জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে বিভিন্ন ধরণের সমস্যার সম্মোখীন হয়। এই পোস্ট আজকে আমি আপনাদেরকে জানাবো মোটর সাইকেল লাইসেন্স করতে কি কি লাগে, মোটরসাইকেলের লাইসেন্স করতে কত টাকা লাগে, পেশাদার মোটর ড্রাইভিং লাইসেন্স বয়স কত, লার্নার কার্ড দিয়ে মটর সাইকেল চালানো যাবে কি না, পেশাদার ও অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর পার্থক্য কি, ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে জরিমানা কত এবং মোটরসাইকেল ড্রাইভিং লাইসেন্স সম্পর্কিত সকল কিছু। তাই আপনারা মোটর সাইকেল ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম ও শর্তসমুহ জানতে পোস্টি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।

 ড্রাইভিং লাইসেন্স করার শর্তসমুহঃ

ড্রাইভিং লাইসেন্সের পূর্বশর্ত হলো লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স। ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদনকারীর ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা ৮ম শ্রেণী পাশ হতে হবে। অপেশাদার এর ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্য ন্যূনতম ১৮ বছর এবং পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য বয়স ন্যূনতম ২১ বছর লাগবে। আর যে ড্রাইভিং লাইসেন্স করবে তাকে অবশ্যয় মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে। উপরের শর্তসমুহ পূরণ করতে পারলে আপনি সহজে ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে পারবেন।

মোটর-সাইকেল-লাইসেন্স-করতে-কি-কি-লাগে
মোটর সাইকেল লাইসেন্স করতে কি কি লাগে

মোটর সাইকেল লাইসেন্স করতে কি কি লাগে?

মোটর সাইকেল লাইসেন্স করতে কি কি লাগে? এই প্রশ্নটা আমাদের সকলের মাথাই ঘুরপাক খাই। মোটরসাইকেলের জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে আপনার কিছু ডকুমেন্টসের প্রয়োজন হবে। মোটর সাইকেল লাইসেন্স করতে যা যা লাগবে- নির্ধারিত ফি (১ ক্যাটাগরি- ৩৪৫/- ও ২ ক্যাটাগরি- ৫১৮/- টাকা) বিআরটিএর নির্ধারিত ব্যাংকে (ব্যাংকের তালিকা www.brta.gov.bd-এ পাওয়া যাবে) জমার রশিদ। ৫ সদ্য তোলা ৩ কপি স্ট্যাম্প১ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি লাগবে এবং আবেদন করার দুই থেকে আড়াই মাস পর লিখিত, মৌখিক ও ফিল্ড টেস্ট পরীক্ষা দিতে হবে।

মোটর সাইকেলের লাইসেন্স করতে কত টাকা লাগে?

মোটরসাইকেলের লাইসেন্স করতে কত টাকা লাগে এইটা আমরা সবাই জানতে চাই। তবে অনেকেই সঠিক তথ্য দেই না। আজকে আপনাদের জানাবো মোটরসাইকেলের লাইসেন্স করতে কত টাকা খরচ হয়। বর্তমানে ১০০ সিসির মোটরসাইকেলের মূল নিবন্ধন ফি ৪২০০ টাকা লাগে। তবে এর সঙ্গে সড়ক করসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে আপনাকে দুই বছর মেয়াদের জন্য ১০ হাজার ৫৮৯ টাকা দিতে হবে। আর ১০০ সিসির বেশি ক্ষমতা সম্পূর্ণ মোটরসাইকেলের জন্য মূল নিবন্ধন ফি ৫৬০০ টাকা এবং অন্যান্য খরচ মিলিয়ে ১৩ হাজার ৫৯০ টাকা দিতে হবে।

 পেশাদার মোটর ড্রাইভিং লাইসেন্স বয়স কত?

মোট ৩টি ধরণের পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে। যা আপনার শরীরের ওজনের উপর নির্ভর করে। নিচে পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স করার বয়স সম্পর্কে আলোচনা করা হলঃ

১। হালকা মোটরযানের (ওজন ২৫০০ কেজির নিচে) জন্য প্রার্থীর নূন্যতম বয়স লাগবে ২০ বছর

২। ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদনকারীর ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা ৮ম শ্রেণী পাশ এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা সর্বনিম্ন অষ্টম শ্রেণী পাশ হতে হবে।

৩। মধ্যম মোটরযানের ওজন ২৫০০ থেকে ৬৫০০ কেজির জন্য কমপক্ষে ২৩ বছর তবে এ ক্ষেত্রে প্রার্থীর কমপক্ষে ৩ বছর ব্যবহৃত হালকা মোটরযান ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে।

  লার্নার কার্ড দিয়ে মটর সাইকেল চালানো যাবে কি না?

বর্তমান সময়ে অনেকের প্রশ্ন থাকে যে শিক্ষানবিস বা লার্নার লাইসেন্স দিয়ে রাস্তায় গাড়ি/মোটরসাইকেল চালানো যাবে কি না? এটা সহজে বোঝা যাই মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩-এর ধারা ৩(১) তে যেখানে স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে– ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া কোন ব্যক্তি রাস্তায় বা জনসাধারণের ব্যবহারের স্থানে মোটরযান চালাতে পারবেন না। আর তাই বলা যাই শিক্ষানবিস বা লার্নার লাইসেন্স দিয়ে রাস্তায় গাড়ি/মোটরসাইকেল চালানো যাবে না। গাড়ি চালানোর জন্য অবশ্যয় আপনাকে ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে হবে।

 পেশাদার ও অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর পার্থক্য কি?

আপনারা অনেকে জানতে চান যে, পেশাদার এবং অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স কাকে বলে এবং কোনটা বেশি ভাল। কোন লাইসেন্স করলে বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে এবং কোনটার মেয়াদ কত বছর। নিচে পেশাদার ও অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর পার্থক্য এবং সকল কুটিনাটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলঃ

পেশাদার ও অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর পার্থক্য কি
পেশাদার ও অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর পার্থক্য কি

 পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সঃ

পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়ে যে কোন ধরণের গাড়ি চালানো যাবে। যেমন মাঝারি বা ভারী যান, বাস, কাবার রেগুলার, ৬৫০০ বেশি ওজনের গাড়িগুলো চালাতে পারবেন পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়ে। পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ হয় ৫ বছর এবং পলিশ ভেরিফিকেশন প্রয়োজন হয়। ৫ বছর পরপর নবায়ন করার জন্য প্রশিক্ষণ এবং ব্যবহারিক পরিক্ষা দিতে হয়

 অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সঃ

অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়ে আপনি শুধু মাত্র ২৫০০ কেজির নিচে যে মোটরযান গাড়িগুলো রয়েছে সেগুলো চালাতে পারবেন। যেমন- মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, ছোট রেগুনার,এইসমস্ত ছোটখাটো গাড়ি গুলো চালাতে পারবেন। অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর মেয়াদ ১০ বছর এবং পলিশ ভেরিফিকেশনের প্রয়োজন হয় না। ড্রাইভিং লাইসেন্স এর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলে নবায়ন করার জন্য কোনো পরিক্ষার প্রয়োজন হয়না।

 ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে জরিমানা কত বা ৬৬ ধারার জরিমানা কত?

ফরমে আইনের ধারা অনুযায়ি ৬৬ অমান্য করলে প্রথমবার পাঁচ হাজার এবং দ্বিতীয়বার ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এই ধারাটি ড্রাইভিং লাইন্সেন্স না থাকা, মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স ব্যবহার, ভিন্ন শ্রেণির লাইসেন্স ও ‘পেশাদার’ লাইসেন্স না নিয়ে গণপরিবহন চালালে তাদের ক্ষেত্রে প্রয়োজ্য।

ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে জরিমানা কত বা ৬৬ ধারার জরিমানা কত
ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে জরিমানা কত বা ৬৬ ধারার জরিমানা কত

 সর্বশেষ কথাঃ

মোটরসাইকেল ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্য আপনাকে অবশ্যয় কিছু নিয়ম এবং শর্ত পূরণ করতে হবে। আপনি যদি লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদনকারীর হন তাহলে আপনার ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা ৮ম শ্রেণী পাশ এবং বয়স ২১ বছর হতে হবে। আর অপেশাদার এর ড্রাইভিং লাইসেন্স করলে ন্যূনতম ১৮ বছর লাগবে। মোটরসাইকেল ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্য আপনার (১০ হাজার ৫৮৯ টাকা) ১০০ সিসির জন্য এবং (১৩ হাজার ৫৯০ টাকা) ১০০ সিসি থেকে বেশি ক্ষমতার মোটরসাইকেল জন্য খরচ হতে পারে। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানোর হলে ৬৬ ধারা অনুযায়ি ৫-১০ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে।

আশা করি আমার পোস্টি ভাল করে পড়লে আপনি মোটরসাইকেলের ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম ও শর্তসমুহ জানতে পারবেন। এমনি সব প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে আমাদের সাথে থাকবেন। ধন্যবাদ!

ট্যাগ সমুহঃ

  • মোটর সাইকেল ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম
  • অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স
  • ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে জরিমানা কত
  • পেশাদার ও অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর পার্থক্য কি
  • লার্নার কার্ড দিয়ে মটর সাইকেল চালানো যাবে কি না?
  • পেশাদার মোটর ড্রাইভিং লাইসেন্স বয়স কত?
  • মোটর সাইকেল লাইসেন্স করতে কি কি লাগে?
  • মোটর সাইকেলের লাইসেন্স করতে কত টাকা লাগে?
  • ড্রাইভিং লাইসেন্স করার শর্তসমুহ

 FAQ:

১। মোটর সাইকেল ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য সর্বনিম্ন কতটুকু শিক্ষাগতা লাগবে?

উওরঃ আপনি যদি পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স বানাতে চান তাহলে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা সর্বনিম্ন অষ্টম শ্রেণী পাশ হতে হবে।

২। মোটর সাইকেল লাইসেন্স করতে কি কি লাগে?

উওরঃ নির্ধারিত ফি (১ ক্যাটাগরি- ৩৪৫/- ও ২ ক্যাটাগরি- ৫১৮/- টাকা) বিআরটিএর নির্ধারিত ব্যাংকে (ব্যাংকের তালিকা www.brta.gov.bd-এ পাওয়া যাবে) জমার রশিদ। ৫ সদ্য তোলা ৩ কপি স্ট্যাম্প ও ১ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি লাগবে। আর আবেদন করার দুই থেকে আড়াই মাস পর লিখিত, মৌখিক ও ফিল্ড টেস্ট পরীক্ষা দিতে হবে।

 ৩। লার্নার কার্ড দিয়ে মটর সাইকেল চালানো যাবে কি না?

উওরঃ না, আপনি লার্নার কার্ড দিয়ে মটর সাইকেল চালাতে পারবেন না। মটর সাইকেল চালানোর জন্য আপনাকে অবশ্যয় ড্রাইভিং লাইসেন্স বানাতে হবে।

৪। ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে জরিমানা কত বা ৬৬ ধারার জরিমানা কত?

উওরঃ আপনার যদি ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকে, আর আপনি যদি গাড়ি চালান সে ক্ষেত্রে ৫-১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।

আরো পড়ুনঃ

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button