মধু ও কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা-২০২৩

বর্তমানে মধু ও কালোজিরার উপকারিটা প্রত্যক্ষ ও পরোক্তভাবে আমাদের সাথে জড়িত। এই পোস্টে আমি মধু এবং কালোজিরা সম্পর্কিত সকল তথ্য এবং এগুলো কিভাবে খেতে হয়, খাওয়ার নিয়ম সমূহ এবং খাওয়ার উপকারিতা, কোন সময় খেলে সবচেয়ে ভালো উপকার পাওয়া যাই, সেই সম্পর্কে আলোচনা করব। তাই সবাই এই পোস্টি ভালভাবে পড়বেন, যাতে আপনারা মধু ও কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে সকল কিছু জানতে পারেন।
সকালে খালি পেটে মধু ও কালোজিরা খাওয়ার নিয়মঃ
সকালে ঘুম থেকে উটে খালি পেটে মধু খাওয়া একটি ভাল অভ্যাস। যা আপনার জীবকে সন্দুর ও সুস্থ করে তুলে। তবে মধুর সাথে কালোজিরা মিশিয়ে খাওয়াটা আরো একটি ভালো প্র্যাকটিস। এটি যে কোন রোগের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য দেহকে সতেজ রাখে এবং দেহের সার্বিক উন্নতি ঘটায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে কালোজিরার সাথে মধু মিশিয়ে খেলে দেহের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রিত থাকে এবং এটি ডায়াবেটিস এর মত সকল রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে। তাছাড়া এটি রোগীর রক্তের গ্লুকোজ কমায় যা ডায়াবেটিস এর মত রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে। আর তাই আমাদের সবার উচিত সকালে কালোজিরার সাথে মধু মিসিয়ে খাওয়া।

কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতাঃ
কালোজিরা একটি মাঝারি আকৃতির মৌসুমী গাছ, যা একবার ফুল ও ফল হয়। আর কালোজিরার বৈজ্ঞানিক নাম Nigella Sativa Linn। কালোজিরার স্ত্রী, পুরুষ দুই ধরনের ফুল হয়, রং সাধারণত হয় নীলচে সাদা (জাত বিশেষে হলুদাভ) এবং পাঁচটি পাঁপড়ি বিশিষ্ট । কালোজিরা আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। নিয়মিত কালোজিরা খেলে শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সতেজ থাকে যা যেকোনো জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে দেহকে প্রস্তুত করে। তোলে নিচে আমি কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম এবং এর উপকারিতা সম্পর্কে আমার নিজের মতামত প্রদান করচি-
প্রতিদিন খালি পেতে এক চিমটি বা একচা চামচ পরিমাণ কালোজিরা এক গ্লাস পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হয়। যা রক্তের গ্লকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত রাখে। তাছারা রং চা অথবা গরম ভাতের সাতে মিশিয়ে দৈনিক ২ বার করে খেলে পারেন যা দেহের জন্য ভাল উপকারে আসবে। কালোজিরা খেলে যে সকল উপকার হয় তা নিম্নে আলোচনা করা হলঃ
১। স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে যে সকল কাজ করেঃ
এক চা চামচ পুদিনা পাতার রস বা কমলার রস বা এক কাপ রং চায়ের সাথে এক চা চামচ কালোজিরা তেল মিশিয়ে দিনে ২-৩ বার করে নিয়মিত খাবেন। যা আপনার সকলদুশ্চিন্ত দূর করবে। এছাড়া এটি আপনার মেধার বিকাশের জন্য কাজ করবে দ্বিগুণ হারে। কালোজিরা নিজেই এক ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিসেপটিক যা মস্তিস্কের রক্ত সঞ্চলন বৃদ্ধির মাধ্যমে স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।
২।মাথা ব্যাথা ও সর্দি নিরাময়েঃ
১/২ চা চামচ কালোজিরার তেল মাথায় ভালভাবে লাগালে এবং এক চা চামচ কালোজিরার তেল এর সাথে সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে দিনে ২/৩ বার করে, ২/৩ সপ্তাহ খেলে মাথা ব্যাথার উপকার হয়। আবার এক চা চামচ কালোজিরার তেলের সাথে ২ চামচ তুলসী পাতার রস ভালভাবে মিশিয়ে খেলে জ্বর, সর্দি, কাশি ও বিভিন্ন ধরনের ব্যাথার কাজ হয়।
৩। ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রনে কালোজিরার উপকারঃ
বর্তমান সময়ে ডায়াবেটিস একটি বহু মাত্রিক সমস্যা। কম বেশি সকল বয়সে এই সমস্যা দেখা যাই। তবে কালোজিরার রস ডায়াবেটিস এর জন্য একটি ভাল উপাদান। এক চিমটি অথবা এক চা চামচ পরিমান কালোজিরা এক গ্লাস পানির সাথে মিশিয়ে খেলে রক্তের গ্লকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকে। তাছারা ও রং চা অথবা গরম ভাতের সাথে মিশেয়ে এটি খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। তবে প্রতিদিন ২-৩ বার খেলে ভাল।
৪।ব্লাডপ্রেসার নিয়ন্ত্রনে রাখতে কালোজিরাঃ
প্রতিদিন সকালে দুটি রসুনের কোষ চিবিয়ে খেয়ে, সমস্ত শরীরে কালোজিরার তেল মালিশ করে সূর্যের তাপে কমপক্ষে আধাঘন্টা থেকে এক ঘন্টা অবস্থান করলে এবং এক চা-চামচ কালোজিরার তেলের সাথে সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে প্রতি সপ্তাহে ২/৩ দিন খেলে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছারা ও আর বিভিন্ন কাজে কালোজিরার অবধান রয়েছে।
মধু খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সমুহঃ
মধু হল এক প্রকারের মিষ্টি ও ঘন তরল পদার্থ, যা মৌমাছি ও অন্যান্য কীট পতঙ্গ ফুলের নির্যাস হতে তৈরি করে যা মৌচাকে সংরক্ষণ করে। মধু একটি উচ্চ ঔষধিগুণ সম্পন্ন ভেষজ তরল পদার্থ যা সুপেয়। বিভিন্ন খাদ্য প্রস্তুতকরণে এর ব্যবহারে চিনির চেয়ে বেশি সুবিধা রয়েছে। এর বিশিষ্ট গন্ধের জন্য অনেকেই চিনির চাইতে মধুকে বেশি পছন্দ করে থাকেন।
তবে মধু খাবার নিয়ম কানন রয়েছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে ১-২ চামচ মধু খেলে সবথেকে ভাল উপকার পাওয়া যায়। তবে গরম পানি অথবা গরম দুধের সাথে কখনো মধু মিশিয়ে খাওয়া টেক না। কারন এটি রান্না করে কাবার জিনিষ না। সবসময় হালকা গরম দুধের সাথে মধু খেতে হবে। তবে অনেকে বিকালে ও রাতে মধু খায়। নিচে আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে মধু খাওয়ার কিছু অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলঃ
১। মধুতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াই।
২। এছাড়া এটি হজমশক্তি বৃদ্ধি ও সর্দি-জ্বর উপশম করে।
৩। কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূরীকরন, রক্তের কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমানো, ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে।
৪। শরীরের ওজন কমানো জন্য বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৫। মধু রক্তের হিমোগ্লোবিনের পরিমান বৃদ্ধি কিরে, ফলে যারা রক্ত শূন্যতাই ভূগে তারা বেশি করে মধু খাওয়া দরকার।
৬। মধুতে রয়েছে বিভিন্ন খনিজ উপাদান যা নিয়মিত খেলে আমাদের শরীরে (কপার, লৌহ, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি) এসব খনিজের অভাব পূরণ হয়৷
৭। মধু শিশুদের হাড়ের গঠন মজবুত করে তুলে, ফলে দৃষ্টিশক্তি এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে।
৮। শারীরিক এবং যৌন দূর্বলতা দূরীকরণে মধুর রয়েছে বিশেষ ধরনের ভূমিকা ৷
৯। মধুতে রয়েছে অ্যান্টিই অক্সাইড যা দেহের বা ত্বকের সন্দুর্য বৃদ্ধি করে।
১০। মধু এবং লেবুর শরবত খাওয়া খুবই উত্তম। মধুতে বিদ্যমান খাদ্য উপাদানগুলি শরীরে তৎক্ষণাৎ শক্তি যোগায় এবং শরীরের সকল ক্লান্তি দূর করে।
তাছারা ও মধুতে রয়েছে আরও বিভিন্ন ধরনের গুনাগুন যা কম বেশি দেহের সকল রগের কাজ করে। তাই প্রত্যেকের উচিত সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেঠে ১-২ চামচ মধু হাতের তালুতে নিয়ে টেনে টেনে খাওয়া।
ইসলামে মধু খাওয়ার নিয়মঃ
মধু এক প্রকারের মিষ্টি ও ঘন তরল পদার্থ যার মধ্যে রয়েছে অনেক রোগের প্রতিষেধক। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন : তাতে মানুষের জন্য রোগের প্রতিকার রয়েছে। (সুরা আন-নাহল, আয়াত : ৬৯)। আর যেকোনো রোগীকে ভালভাবে মধু পান করানো হলে সে সুস্থ হয়ে ওঠে।
শেষ কথাঃ
মধু এবং কালোজিরা এরা অতি প্রয়োজনীয় উপাদান যা মানষের দেহের জন্য অনেক অপকারী। তবে অতিরিক্ত মাত্রায় এগুলো খাওয়া যাবে না। নিয়ম কানন মেনে এগুলো খেতে হবে। প্রতিদিন কম করে হলে ও ১-২ চা চামচ মধু এবং ১ চামচ কালোজিরা ১ গ্লাস পানির সাথে মিশিয়ে খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াই, হজমশক্তি বৃদ্ধি ও সর্দি-জ্বর উপশম করে, শারীরিক এবং যৌন দূর্বলতা দূরীকরণে কাজ করে, দৃষ্টিশক্তি এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে এবং বহ মাত্রিক ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রন করে। যেহেতু এগুলো আমাদের জীবনে অতি প্রয়োজনীয়, তাই মধু ও কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা জানা সবার উচিত। আর তাই বলা যাই, মধু ও কালোজিরার উপকারিতা অপরিসীম।
এই সকল পোষ্ট আসলে অনেক উপকারি। আশা করি আপনি, আর প্রয়োজনীয় পোস্ট করবেন। ধন্যবাদ…।
Thanks